ঢাকা,বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪

অবাস্তব ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে বাজেট দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী : এরশাদ

অনলাইন ডেস্ক ::Kawsar-Azam-001

অবাস্তব ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে অর্থমন্ত্রী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ার‌ম্যান ও প্রধানমন্ত্রী বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

তিনি বলেছেন, ‘অর্থমন্ত্রী ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বাজেটের এই টাকার সংস্থান করবেন বৈদেশিক সাহায্য থেকে, অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে, ব্যাংক ঋণ থেকে। কিন্তু তিনি পারেননি (বিগত দিনে), মাত্র ৬৫ ভাগ সফল হয়েছেন। আমার মনে হয়, এবারও তিনি পারবেন না। দুই দিন পরে অর্থবছর শেষ। এ সময়ে ঘাটতি পূরণ করতে পারবেন না। সুতরাং অবাস্তব ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে অর্থমন্ত্রী বাজেট পেশ করেছেন। মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে বলব আপনি মাঝে মাঝে উত্তেজিত হয়ে যান। মেডিটেশন করলে মনে হয় শা্ন্ত হয়ে যাবেন। মেডিটেশন করলে মনটা শান্ত হয়, দেহটা শান্ত হয়।’

বুধবার (২৮ জুন) জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেছেন এরশাদ। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। বৃহস্পতিবার ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট পাস হবে।

২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট প্রসঙ্গে এরশাদ বলেছেন, ‘অর্থমন্ত্রী ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বৃহৎ বাজেট দিয়েছেন। তিনি বলেছেন এটা তার শ্রেষ্ঠতম বাজেট। আমি কিছুদিন আগে রংপুরে গিয়েছিলাম, আমাকে একজন বললেন, নামেন।নামলাম। বলললেন আমাগো কি মাইর‌্যা ফালাতে চান? বললাম কি হইছে? ৫০ টাকা কেজির চাল খাই। শুনছি বাজেটের পর সবকিছুর দাম বাড়বে? আমরা বাচমু কি কইর‌্যা? প্রধানমন্ত্রীকে বলেন..। আমি তো তাকে বলতে পারলাম না মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার সঙ্গে দেখা করেন না। কি করে বলব। আমি বলব.. উনার কাছে (অর্থমন্ত্রী) এটি জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ বাজেট হতে পারে, জনগণের কাছে এটা নিকৃষ্টতম বাজেট। অর্থমন্ত্রী আমার সাথে ছিলেন। তার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। ঋণ শোধ করতে পারব না। সাধারণ মানুষ ব্যবাসীয়রা এটাকে দুঃসহ বাজেট হিসেবে অভিহিত করেছে।’

বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি-অনিয়মের কথা তুলে ধরে এরশাদ বলেছেন, ‘যারা ব্যাংকের টাকা লুট করেছে, তারা কি সরকারের চাইতেও শক্তিশালী? জানতে চাই, কারা লুটপাটের পেছনে আছে। রিজার্ভ থেকে টাকা চুরি হয়েছে। অনেকের নামও এসেছে, আমরা নাম জানতে পারিনি। তারা কি ধরা ছোঁয়ার উর্ধ্বে? অপরাধীরা সমাজে দুঃখজনকভাবে এখনো বিচরণ করছে।অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করব তাদের নামগুলো প্রকাশ করেন।দেশে শেয়ার মার্কেট অর্থ লোপাটের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছে।২০১০ সালে শেয়ার মার্কেট লুট হলো। আমি সেখানে গেছি। মানুষের আর্তনাদ দেখেছি। অসংখ্য মানুষ আত্মহত্যা করেছে। এখনো আস্থার সঙ্কট শেয়ার মার্কেটে।’

সাবেকত সেনাপ্রধান এরশাদ বলেছেন, ‘জাস্টিস সাত্তার বললেন তার মন্ত্রিসভার সবাই দুর্নীতিপরায়ণ। আমি দেশ পরিচালনায় অপরাগ। সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চাই। আমরা (সেনাবাহিনী) প্রস্তুত ছিলাম না।দেশ পরিচালনা করা সহজ ব্যাপার নয়। আমরা এ দায়িত্ব নিতে চাইনি। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত এ দায়িত্ব নিতে পরিস্থিতি বাধ্য করেছিল। আমি সেদিন বলেছিলাম, শৃঙ্খলা ফিরে আসার পর নির্বাচন দিয়ে ব্যারাকে ফিরে যেতে চাই। আমি কথা রেখেছিলাম। ১৯৮৪ সালে নির্বাচন দিয়েছিলাম। সে নির্বাচনে যদি সকলে (সবদল) অংশগ্রহণ করতেন, তাহলে ব্যারাকে ফিরে যেতে পারতাম। দুঃখের বিষয় সবাই সে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেনি। বিএনপি-জামায়াত, এখানে মেনন সাহেব আছেন, উনারা অংশগ্রহণ করেন নাই। যার ফলে ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টি গঠন করতে হয়েছিল। আমি আমার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছিলাম। আমার কোনো দোষ নাই। আমাকে মাঝে মাঝে বলা হয় স্বৈরাচার। কোনো উপায় ছিল না, আমাকে ক্ষমতা নিতে হয়েছিল। জাতির স্বার্থে শৃ্ঙ্খলা ফিরিয়ে এনে নির্বাচন দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা অংশগ্রহণ করেন নাই। তারপরে আমার দুর্বিসহ জীবন।’

জেল জীবনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এরশাদ বলেছেন, “৬টি বছর কারাগারে কাটাতে হয়েছিল। কথা বলার লোক নেই, আমি একলা। নির্জন কারাগার। দুর্বিষহ যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে ৬টি বছর। আমার স্ত্রী আড়াই বছর জেলে ছিল। আমার শিশু সন্তানকে জেলে নিয়েছিল। তার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছিল। আমি স্নান করতে পারি নাই ৬ বছর। চাঁদ দেখতে পারি নাই। ১২টা ঈদে অংশ (বাইরে) নিতে পারি নাই। ইফতারের সময় যে ইফতার দিত, বলেছিলাম আমাকে একটা বিস্কুট দিতে পারবেন? ডিআইজি বলেছিলেন বরাদ্দের বাইরে কিছু দেওয়া যাবে না। সব কথা মনে আছে।সেদিনের কথা স্মরণ করে একটা কবিতা লিখেছিলাম। তা পড়ে শুনাতে চাই। ‘ওরা আমার সকল অনুভব ও চিন্তাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। সে কথা লিখতে চেয়েছি, কিন্তু লিখতে পারি না। শুধু জানি বাইরের পৃথিবীতে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত আর বসন্ত আসে। শরৎ চলে যায়, হেমন্তরা মিশে থাকে সকল স্বপ্নের সঙ্গে। আমি লিখতে পারি না ছোট্ট্র ঝরা পাতার কথা। লিখতে পারি না আমি, একখানা সাদা কাগজ, একটি কলম। সারাদিন ভাবি সাদা কাগজ ও কলমের কথা। কতদিন নক্ষত্র দেখিনি, আমার আত্মার ….।’ সেই কান্নার সেতু বয়ে আজ আমি আপনাদের মাঝে সংসদে এসেছি। অনেক দু:খ বেদনা অতিক্রম করে এখানে এসেছি। স্বপ্ন দেখাতাম, এখনো স্বপ্ন দেখি।”

পাহাড় ধস ও ঈদে বাড়ি যাওয়ার সময় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এরশাদ। গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন ভাতা বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেন তিনি।

শিক্ষা ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তনের অনুরোধ জানিয়ে সাবেক এ রাষ্ট্রপতি বলেছেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস, হচ্ছে। কোচিং-নোটবুক ছেয়ে গেছে। নিজেই দেখেছি, শিক্ষকরা নকল করতে সাহায্য করে। সমাজ কোথায় গেছে, ভাবতে ঘৃণা হয়। কি করে শিক্ষক এ কাজ করতে পারে? শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ, সবাইকে পাস করাতে হবে। সে গরু হোক আর ছাগল হোক পাস করাতে হবে। জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের টিভিতে জিজ্ঞেস করলো, রাষ্ট্রপতির নাম বলতে পারে না। আমাদের সময় ফার্স্ট ডিভিশন, সেকেন্ড ডিভিশন, থার্ড ডিভিশন ছিল। থার্ড ডিভিশনে পাস করলে বলব, তুমি থার্ড ডিভিশনে পাস করেছ। এখন ৪.৭ পাইলে কি হয় বলতে পারি না। এটা ফার্স্ট ডিভিশন নাকি সেকেন্ড ডিভিশন বলতে পারি না।’ কারিক্যুলাম পরিবর্তন করা যায় কিনা, সে ব্যাপারে ভাবার আহ্বান করেন তিনি।

এরশাদ কথা বলেন স্বাস্থ্য সেক্টর নিয়েও। তিনি বলেছেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী আমার প্রিয় ব্যক্তি। আমি যা বলি উনি তা মানেন। আমরা সবাই বিদেশে যাই চিকিৎসা নিতে। এখানকার ডাক্তারদের প্রতি আস্থা রাখতে পারি না। পেটের অসুখ হয়েছে, হার্টের টেস্ট করতে হবে। ১৫-২০টি টেস্ট দেয়। সেখান থেকে কমিশন খায়।ডাক্তারের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পাচ্ছি না, তবুও বলতে হচ্ছে। সবাই কমিশন খায়।সত্য কিনা বলেন..।গরীব মানুষ কি করবে?’

রংপুর মেডিকেল কলেজকে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবি জানিয়ে এরশাদ বলেছেন, ‘এটা পচে গেছে। নতুন করে গড়ে তুলুন।’

কৃষি সংশ্লিষ্ট সকল পণ্যের উপর কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে এরশাদ বলেছেন, ‘ কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গে একমত হয়ে আমিও কৃষিপণ্যের ওপর সকল কর প্রত্যাহার করতে হবে। কৃষক আমাদের প্রাণ। খাদ্য গুদামের প্রকৃত চিত্র বুঝে খাদ্যআমদানি করার উচিত। চালের দাম কমাতে চাল আমদানি করা হোক।’

তিনি বলেছেন, ‘শুধু বিড়ির উপর কর বাড়বে কেন। সিগারেটে কি নিকোটিন নেই। আমি বিড়ির উপর ২০শতাংশ ও সিগারেটের ওপর ১০০ শতাংশ কর আরোপের দাবি করছি।’

তিনি আরো বলেছেন, ‘২৫ বছর বিমানে উঠি না। বিমান সময়ের সিডিউল নেই। বিমানে প্রধানমন্ত্রীর খাদ্য নিয়ে সমস্যা হয়, এটা মেনে নেওয়া যায় না। বিমান আমাদের গর্ব। আমাদের পাতাকা বহন করে। আমাদের পতাকা অপমান করবেন না। আমি বিমানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

পাঠকের মতামত: